স্কুল জীবনের ১০ টি সেরা বই

স্কুলজীবন প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীর জীবনে এক মূল্যবান সময়। কারণ দীর্ঘ স্কুলজীবনে চলার পথে অনেকের সাথে বন্ধুত্ব তৈরি হয়,অনেক অভিজ্ঞতার সঞ্চার হয়। আবার তখন অফুরন্ত সময় থাকে অনেক ভালো কিছু করার। বই পড়ার অভ্যাসটা গড়ে উঠে তখনই। আমি যখন ক্লাস ফাইভে পড়ি, তখন থেকেই আমাদের বাসার কাছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি আসতো। মূলত সেই সময় থেকেই নিয়মিত গল্পের বই পড়তাম। স্কুলে থাকার সময় কিছু বই মনের মাঝে দাগ কেটে রেখেছে। মনে হয়েছে, এগুলো না পড়লে অনেক কিছুই মিস করতাম। চলো জেনে নেই সেই বইগুলোর নাম!

১। আমি তপু, মুহম্মদ জাফর ইকবাল:

জাফর ইকবাল স্যার আমার অতি প্রিয় লেখকদের একজন। তাঁর দারুণ সব লেখার মধ্যে আমার সবথেকে ভালো লেগেছে এই উপন্যাসটি।

কেন পড়বে:

এই গল্পটি কিশোর তপুকে নিয়ে লেখা। তার জীবনের খারাপ সময়ের বর্ণনা, নিঃসঙ্গতায় ছোট্ট ইঁদুরের সাথে গল্প-সব কিছু বিবেচনা করা হলে কিশোর বয়সে এত কষ্ট করা ছেলেটির জন্য চোখের কোণে পানি চলে আসে। আমারো এসেছিল, প্রথম যেদিন বইটি পড়ি। বারবার পড়েও এখনো সেই অনুভূতি কাজ করে।

২। নাট বল্টু, মুহম্মদ জাফর ইকবালঃ

আমার পড়া সবচেয়ে মজাদার বইগুলোর একটি ছিল এটি । উপন্যাসটির অনেক ঘটনা মনে পড়লে এখনো হাসি পায়!

কেন পড়বে:

ছোট এক শিশুর গল্প যে কিনা ব্যাঙ পকেটে নিয়ে ঘুমায়, নতুন নতুন জিনিস উদ্ভাবন করে, দেশের কাপড় ঘাটতি কমাতে মায়ের শাড়ি ১২ হাত থেকে ৬ হাত কেটে নেয়! একবার হলেও এই ক্ষুদে সায়েন্টিস্টের গল্পটি পড়ে ফেলো, সময় নষ্ট হবে না এটা নিশ্চিত!

৩। শঙ্খনীল কারাগার, হুমায়ূন আহমেদঃ

হুমায়ূন আহমেদ স্যার আমার খুব পছন্দের আরেকজন লেখক। লেখার জাদুতে আমাকে প্রতিনিয়ত মুগ্ধ করেন তিনি। আমার কাছে এই উপন্যাসটিই তাঁর সেরা লেখা বলে মনে হয়েছে।

কেন পড়বে:

প্রত্যহ জীবনের এক সামাজিক গল্প গড়ে উঠেছে খোকার পরিবারকে নিয়ে। যেখানে আছে প্রেম, ভালোবাসা, ভাই-বোনের মধ্যে মমত্ব। বাস্তবতা নিয়ে লেখা বইটি পড়লে সাধারণ একটি পরিবারের জীবন সম্পর্কে ধারণা হবে তোমার। মনে হবে তুমিও এই পরিবারের একটি অংশ, পরিবারের সুখ-দুঃখে আবেগ ছুঁয়ে যাবে তোমাকেও!

৪। রবীন্দ্র ছোটগল্পসমগ্র:

রবিঠাকুরের লেখা নিয়ে আর কি বলবো! প্রথমে সাধু ভাষা পড়তে একটু ভয় পেলেও যখন এই সমগ্র পড়ে ফেললাম, তখন বেশ ভালই লাগল।

কেন পড়বে:

রবীন্দ্রনাথের যে ক’টি ছোটগল্প রয়েছে তার প্রতিটিই আলাদা স্বাদের। সমাজের প্রতিনিয়ত ঘটনাগুলোকে তুলে এনেছেন লেখক তাঁর নিপুণ তুলির আঁচড়ে। তাই একবার পড়তে বসলে আর ওঠার ইচ্ছা হবে না!

৫। জুল ভার্ন সমগ্র:

জুল ভার্নকে প্রায়ই বলা হয় ‘Father of Science Fiction’। তাঁর লেখা বিজ্ঞান কল্পকাহিনীতে বলা বিভিন্ন বাহন আর যন্ত্রের অনেকগুলোই সত্যি হয়েছে আধুনিক পৃথিবীতে, সাবমেরিন এর মধ্যে অন্যতম!

কেন পড়বে:

আমার মত অ্যাডভেঞ্চার আর সাথে একটুখানি বিজ্ঞানের ছোঁয়া পছন্দ যাদের, তাদের অবশ্যই জুল ভার্নের সবগুলো গল্প-উপন্যাস পড়ে ফেলা উচিত। সায়েন্স ফিকশন নিয়ে এমন স্বাদু লেখা খুব কম লেখকই লিখতে পেরেছেন!

৬।পথের দাবী, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়:

বাংলা সাহিত্যে আমার আগ্রহ জন্মানোর শুরুর সময়টায় শরৎ ছিলেন আমার প্রথম পছন্দ।

কেন পড়বে:

কালজয়ী কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অন্যতম সেরা লেখাগুলোর একটি হলো পথের দাবী। বাংলা সাহিত্য ভালো লাগলে এটি একটি অবশ্য পাঠ্য। ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে এক অসাধারণ বিপ্লবী সব্যসাচী আর তাঁর বিপ্লবের দারুণ এক কাহিনী নিয়েই এই উপন্যাসটি।

৭। ১০০ মনীষীর জীবনী:

বিখ্যাত সব মনীষীদের গল্প আমাদের অনুপ্রাণিত করে। আমরা তাদের ত্যাগ তিতিক্ষার কাহিনী শুনে অবাক হই, তাঁদেরকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করি!

কেন পড়বে:

বিশ্বের মনীষীদের জীবনী পড়ে আমরা যেমন তাদের গুণগুলো জানতে পারি, তেমনি তাদের মত জীবন গঠনও করতে পারি। আত্মিক উন্নতি, চরিত্র গঠনের জন্য স্কুলজীবন উত্তম সময়, এজন্য এই বইটি সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারবে।

৮। তিন গোয়েন্দা, রকিব হাসান:

ছোটবেলার বেশিরভাগ সময় কেটেছে তিন গোয়েন্দার ভলিউম শেষ করে। একটা বই নিয়ে বসলে সময় কিভাবে ফুরিয়ে যেত, টেরও পেতাম না!

কেন পড়বে:

যারা রহস্য, অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করো তাদের জন্য তিন গোয়েন্দার বিকল্প নেই। কিশোর পাশা, রবিন মিলফোর্ড , মুসা আমানের সাথে বিচরণ করতে পারবে কল্পনার রাজ্যে-সেটিই বা কম কিসে?

৯। গালিভারস ট্রাভেল, জোনাথন সুইফট:

ছোটবেলায় বড় ভাইয়াদের দেখতাম কেউ একটু লম্বা হলেই তাকে ‘গালিভার’ ডাকতো, আর খাটো বন্ধুদের মজা করে ডাকতো ‘লিলিপুট’ বলে। একটু বড় হয়ে মজাদার এই বইটি পড়ে বুঝলাম আসল কাহিনী টা কী!

কেন পড়বে:

ছোট্ট লিলিপুটদের দেশে গালিভার নামের একজন মানুষকে নিয়ে এই কল্পিত গল্পটি। মজাদার সব কাহিনী আর গভীর চিন্তার মিশেলে এই উপন্যাসটি হয়ে উঠেছে অনন্য!

১০। অলিভার টুইস্ট, চার্লস ডিকেন্স:

এটিকে অনায়াসে চার্লস ডিকেন্সের অন্যতম সেরা উপন্যাসগুলোর একটি বলা যায়। ছোট্টবেলায় জীবন সম্পর্কে ধারাপাত করতে এই বইটির বিকল্প ছিল না!

কেন পড়বে:

ছোটবেলায় বাবা-মা কে হারানো অলিভারকে নিয়ে লেখক অসামান্য এই লেখাটি লিখেছেন। এতিম অলিভারের পরিবার, তার বেড়ে ওঠা, কৈশোরকাল সব কিছুই ফুটিয়ে তুলেছেন এই হৃদয়স্পর্শী গল্পের মাধ্যমে!

এমনই আরো অনেক বই আছে যেগুলো পড়তে গেলে হৃদয়ে দাগ কেটে যায়, কোন কোনটি মনে জাগায় শিহরণ, আবার অট্টহাসিতে ফেটে পড়তে হয় কিছু বই পড়লে! আবার হয়তো সেরকমই কিছু বইয়ের লিস্ট নিয়ে আসবো এখানে, সে পর্যন্ত সবাইকে বই পড়ার শুভেচ্ছা জানিয়ে শেষ করছি। বই পড়ো, নিজেকে জানো, আর আত্মশিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এগিয়ে যাও মননশীলতার পথে!

সূত্র-১০ মিনিট স্কুল।।

Leave a comment